শাহ জাহান আহমেদ (মাল্টা প্রবাসী ) ঃ ধর্ম শব্দের অর্থ ধারণ করা কোনো বস্তু,প্রাণী বা শক্তি যে বৈশিষ্ট্য বা গুণ ধারণ করে সেটাই হচ্ছে তার ধর্ম।আমদের লাউড়েরগড় এলাকায় ছিল মুলত হিন্দু,গারো ও খাসিয়াদের অধ্যুষিত বসতি।আমি আনুমানিক তিন শত বছর আগের কথা বলছি।আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি,আমি আমার পূর্ব পুরুষের ইতিহাসের কথা বলছি।
লেবাই ওভাসাই দুই ভাই ছিলেন।লেবাই ছিল বড়,পেশা ছিল কৃষি কাজ ও শিকার ।লেবাই – মো:লেবাই নাম নিয়ে মুসলমান হন। কি কারনে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন ,তা সঠিক কারন পাই নাই ।তবে ইতিহাস বিশ্লেষন করে কিছু কারন পাওয়া যায়। তৎকালীন সময় ভারতে ক্ষমতায় ছিল মোগলরা। বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট ছোট কিছু হিন্দু রাজ্য ছিল ভারতে। রাজ্য গুলো মোগলদের বার্ষিক খাজনা পরিশোধ করতে হত ,নতুবা এদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রেরণ করে রাজ্য কেড়ে নেওয়া হত। মোগলদের কোন প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হত অথবা ঐ রাজ্যের রাজা ইসলাম ধর্মে গ্রহণ করলে আবার রাজ্য শাসনের দায়িত্ব দেওয়া হত।আবার হিন্দু উচুজাত কর্তৃক নিচু জাতকে নির্যাতন এটা একটা কারন।বিভিন্ন সামাজিক,আর্থিক ও ধর্মীয় উৎসব নিয়ে পর্যন্ত নির্যাতিত ছিল।
একটা আশ্চর্যের কথা বলি,ভারতে কোন এক অঞ্চলে নিচু জাতের মহিলারা বুক উন্মুক্ত রাখতে হত,নতুবা সামাজিক ভাবে বিচার ও জরিমানার সম্মুখীন হতে হত।এটা আন্দোলনের আরেকটা ইতিহাস আছে।ভারত উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশী মানুষ ইসলামের দিকে আসার কারন সুফিগণ,মুলত সুফিদের কারনে দলে দলে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাদের চারিত্রিক ধীরতা,নৈতিকতা , উদারতা ও মানবিকতা ইত্যাদি কারনে অন্যান্য ধর্মের লোক আকৃষ্ট হয়।
শওকত আলীর বিখ্যাত উপন্যাস “প্রাদোষে প্রাকৃতজন” নায়িকা ললিতা ছোটবেলা বিধবা হয়,আস্তে আস্তে বড় হয়ে শরীরে যৌবনের অস্তিত্ব টের পায় এবং খেলার সাথীর সাথে আস্তে আস্তে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । ললিতা তার প্রেমিককে বলে,চল গ্রামের কাছে একজন দরবেশ এসেছেন তার কাছে যাই।ললিতা আরও বলে, আমরা যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি,তবে হিন্দু সমাজ আমাদের কিছু বলতে পারবে না।আমরা নতুন সংসার শুরু করব ও নতুন সমাজে যোগ দিব। মুলত: সুফিরা মুসলিম সমাজ গঠনে বড় ভূমিকা পালন করেন।
দরবেশগন ছিলেন আধাত্বিক প্রভাবে প্রভাবিত ও সাথে ছিল তুর্কি তলোয়ারবাজ যা পৃথিবীর বিখ্যাত। তৎকালীন সময়ে ধর্ম প্রচারের জন্য যারা আসতেন, তারা ছিলেন ইসলামও অন্যান্য শিক্ষা,যথা চিকিৎসা বিদ্যা ,সমাজ বিদ্যা ও যুদ্ধ বিদ্যায় ভাল জ্ঞান ছিল, তাছাড়া সম্রাট কতৃক সাহায্য প্রাপ্ত ।বলা দরকার তৎকালীন হিন্দু সমাজে বিধবা বিবাহের প্রচলন ছিল না, হাজার হাজার বিধবা ছিল সমাজে।সমাজ সংসার বুঝার আগেই বিয়ে হয়ে যেত।যখন যুবতি হয় ও সব কিছু বুঝে তখন কিছু করার নেই। সুতরাং অনৈতিক সম্পর্ক্য হতেই পারে,যা সবাই নিজেকে ধর্মের রীতিনীতি দিয়ে কাম ইচ্ছা দমন করা সম্ভব ছিল না।এটা কিন্তু সবার ক্ষেত্রে নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে।এই সুযোগটা ইসলাম ধর্মে এসে কাজে লাগায় কেউ কেউ, কারন ইসলাম ধর্মে বিধবা বিবাহ প্রচলন ছিল।স্বয়ং নবী হজরত মোহাম্মদ (সঃ)এর প্রথম বিয়ে ছিল বিধবা।
ভারতের রাজপুতরা ছিল যোদ্ধা জাতি,সহজে এরা বশ্যতা স্বীকার করা জাতি না।এক রাজপুত রাজার ভাল সম্পর্ক্য ছিল সম্রাট হুমায়ূন সাথে,ঐ সময় অন্য এক মুসলিম রাজার সাথে যুদ্ধ বাধে এবং রাজা তার সেনাবাহিনীকে নিয়া যুদ্ধে যাত্রা করে।এদিকে রানীকে কবুতর কে দেখিয়ে বলেন ,যদি এই কবুতর তোমার কাছে ফেরত আসে বুঝবে আমি যুদ্ধে হেরেগেছি ,কিন্তু ভুলবশত কবুতর খাঁচা থেকে বের হয়ে রানীর কাছে চলে আসে। তৎকক্ষনাথ ঐ রানী রাজপুত পরিবারের সবাইকে নিয়া গণ আত্মহত্যা করেন।এদিকে হুমায়ূন রাজপুত রাজাকে সাহায্য করতে এসে দেখেন সব শেষ।এ রকম জাতিও ছিল ভারত বর্ষে জান দিবে ,কিন্তু ধর্ম ত্যাগ করবে না।
শ্রীকান্ত উপন্যাসে রাজলক্ষ্মীর দুই বোনের একসাথে বিয়ে হয়ে যায় এক কুলীন ব্রাক্ষনের সাথে ,বয়স্ক মানুষ কিছুদিন পর দেহ ত্যাগ করেন- তারা হয়ে যায় বিধবা এবং এরপর কি হয় সবাই জানেন।
হিন্দু ও মুসলিম দুই ধর্মের বিশেষ করে ফুফুরা যে কত অসহায় তা নিজের চোখে দেখিতেছি। যে বাড়ীতে জন্ম ও ছোট থেকে বড় হয়েছে,প্রত্যেকটা জিনিসের সাথে তার স্মৃতি জড়িত,এমন কি বাবা মা জীবিত কালে কি আদরই না পেয়েছে । কিন্ত পরে ভাই বা ভাতিজার আমলে সেখানে অনেক সময় এক রাত থাকার অধিকারও থাকে না।মুসলিম মহিলাদের সম্পদের অধিকার কিছু আছে , কিন্তু হিন্দু মহিলাদের তাও নাই।
ধান ভানতে শিবের গীত, মাঝে মাঝে চিন্তা করি মুসলিম আইনে ,আমার মৃত্যুর পর যদি আমার ছেলে-মেয়ে না থাকে ,তবে আমার স্ত্রী সম্পদের ১/৪ (চারের এক ভাগ)। আবার ছেলে ও স্ত্রী না থাকে ,শুধু মেয়ে থাকে,তবে মেয়ে পাবে ১০/১৬(ষোল ভাগের দশ ভাগ)। আইনের কিন্তু সমালোচনা করতে পারবে না,মুরতাদ হয়ে যাবে?
আমি আমাকে প্রশ্ন করি, আমি জীবিত কালে আমার স্ত্রী কি ১/৪ ভাগ দায়িত্ব পালন করছে, তাহলে অন্য মহিলা কে ? বাকি তিন ভাগ দায়িত্ব পালন করছেন? অথবা ঐবাচ্চা কারা আমার ৬ ভাগের দাবিদার,ওরা কি আমার ?
(বিঃদ্রঃ-উপরে লেখাটি কোন ধর্মকে সমালোচনা করতে নয় বরং আমার নিজের মনের এলোমেলো ভাবনা গুলোর কথা আলোকপাত করলাম)
কমেন্ট করুন